দুঃখের শেঁকড়ে বিষ্ময়কর সুখ

 

সাগর আল হেলাল


আরতীতেই সন্তুষ্ট আরতি দেবী । অন্য কিছুতেই তুষ্ট নয় তার মন। লেখিকা তিনি। সর্বধর্মে পারদর্শী। পালনের বেলাতেও সবই পালন করে থাকেন। এক ঈশ্বর যেমন সকল ধর্মালম্বীর পূঁজা, প্রার্থনা, ইবাদত গ্রহণ করে থাকে- ঠিক তেমনই। খুব সুন্দর বক্তব্য দেন আরতি দেবী। শ্রোতাগণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো ওনার বক্তব্য শুনেন। ব্যক্তি জীবনের আরতি দেবী আর বক্তব্য দেওয়া আরতি দেবী দুই জগতের মানুষ, এমনই বলে থাকে যারা ওনার দুই অবস্থার সাথে পরিচিত।

অল্প লেখা-পড়া করা সুবলের বিশ্বাস হয় না এসব। আরতি দেবীর ভাষণের সে পাগল ভক্ত। পরের বাড়িতে কাজ করেও, সে সুযোগ পেলেই আরতি দেবীর ভাষণ শুনতে যায়। হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের টাকায় বই কেনে আরতি দেবীর। বইগুলোকে সে ধর্মগ্রন্থের মতো শ্রদ্ধা করে। যখন পাঠ করে, গ্রন্থে চুমু খায়- পরিষ্কার কাপড়ে মুছে সুন্দর করে তুলে রাখে দেরাজের সবচেয়ে উপরের তাকে। অন্য বইগুলোর উপরে রাখে সে আরতি দেবীর লেখা বই। রামকৃষ্ণ পরমহংস ও স্বামী বিবেকানন্দের উপর লেখা বইখানি তার অনেক পছন্দ।

কথায় বলে- বিধির বিধান, না যায় খণ্ডন। আরতি দেবীর কাজের লোক প্রয়োজন, সুবলও তখন কর্মহীন। আরতি দেবীর বাসায় কাজ করতে যায় সুবল। লোকের মুখে শোনা কথাগুলো মনে রেখেই সুবল আরতি দেবীর ফাই ফরমাশ খাটে। আরতি দেবী সম্পর্কে তার বিশ্বাসে চির ধরে না। আরতি দেবী কোন বিষয়ে রাগ করলে সে তার নিজের ভুল অনুসন্ধানে লেগে যায়। ভাবে নিশ্চয়ই তার নিজের কোন ভুল হয়েছে। এমনি করে দিন যায়, মাস যায়- কেটে যায় পাঁচ বছর।
বিদায়ের পালা। সুবল বিদায় নিতে যায় আরতি দেবীর নিকট। আরতি দেবী হাসতে হাসতে বলে- কিরে কিছু বলবি ! ঘাড় ঝাঁকিয়ে নেতিবাচক উত্তর দেয় সুবল। আরতি দেবী বলেন- যা, যেমন কর্ম করবি- তেমন ফল পাবি। আমার কথাতো ভালো লাগলো না তোর ! সুবল মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
নতুন চাকর রেখেছেন আরতি দেবী। দেবদুলালকে সে ঘরেই থাকতে বলা হয়েছে। পরদিন সকালে দেবদুলাল আরতি দেবীকে চা দিতে এসে একখানা বই রাখলো চায়ের টেবিলে। রামকৃষ্ণ পরমহংস ও স্বামী বিবেকানন্দের উপর আরতি দেবীর নিজের লেখা বই। আড় চোখে দেখলেন তিনি। দেবদুলালকে জিজ্ঞেস করলেন- কই পেলিরে বইখানা ? যেই ঘরে তাকে থাকতে দেয়া হয়েছে, সেই ঘরের তাকিয়ায়- এ কথা জানিয়ে চলে গেলো সে।
আরতি দেবী আশ্চর্য হলেন ! তার বইতো ও ঘরে থাকার কথা নয় ! সুধীজন সমাদৃত নিজের লেখা বইখানির দিকে তাকিয়ে বেশ গর্বের একটা হাসি হাসলেন। কৌতুল বশে বইখানি হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টালেন। অভ্যাসবশত বইয়ের আরম্ভ দেখে, শেষ পাতায় গেলেন। সবার শেষে কাঁচা হাতে লেখা একটা লাইন চোখে পড়লো তার। ওখানে লেখা ছিলো- “রামকৃষ্ণ পরমহংসের বাণী মানে না, অথচ তার উপর বই লেখে- তাকে আমি ঘৃণা করি- সুবল”।
-

৭.৪.২২

চলবে-

Post a Comment

Previous Post Next Post