অণুগল্পঃ নার্গিসের মন ভালো নেই

 




সবেমাত্র যৌবনে পা রেখেছিলো নার্গিস। পাশের বাড়ির অমল বাঁশ ঝাড়ের কাছে একা পেয়ে আঁচল ছিড়ে দেয়। অনেক দিন তাকে খুঁড়িয়ে হাটতে হয়েছিলো। তারপর আঁচলটাকে সেলাই করে সেখানে নতুন পট্টি দিয়ে পুরাতন ছেঁড়া অংশটি ঢাকতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নার্গিস মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছিলো। কিন্তু তাকে পদে বাধা দান করা হয়। তার আয়ের রাস্তায় বেড়িকেড দেয়া হয়, যাতে সে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। একজন ঋণী কথা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।

নার্গিস একজন ঋণগ্রস্ত। আয়ের রাস্তা থেকে বেরিকেড ওঠানো হয় নি এখনো। ঋণ শোধ করবে কিভাবে? তাকে আবারো ঋণ নিতে হয়। ঋণদাতারা কেবল সুদের হার বাড়িয়েই ক্ষান্ত হয় না, ঘুষও নেয়। তাতেও যেনো তাদের মন ভরে না। ছেঁড়া শাড়িটার কথা মনে করিয়ে দেয়।

নর্গিসের নিকটজন নিরুপায়। অমলরা এখন আরও দাপুটে। তাদের নিজেদের বাড়িতে বিশৃঙ্খলা থাকলেও, নার্গিসদের প্রতি তার কর্তৃত্ব থাকা চাই। এ জন্য অমল এলাকার মোড়লে হাতে রেখেছে। মোড়ল একজন ঝানু ব্যবসায়ী। অমলের অনুরোধে মোড়ল নার্গিসের কাছে সওদা বেচতে চায় না। আবার এ কথাও বলে দেয় যে, অমলের কথা মতো চললে- তার কোনো অসুবিধা হবে না। তাকে সে নিরাপদে থাকতে দেবে। তা না হলে, কী হবে- তা সে বলতে পারবে না।

নার্গিস অনেক করে তার অসুবিধার কথা মোড়লকে বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তার ঐ এক কথা, অমলকে খুশি রাখতে হবে। নার্গিসের মন খারাপ দেখে মোড়ল দাঁত বের করে হাসে। ঘেন্ন করে নার্গিসের। কিন্তু উপায় কি? যতো লাঞ্ছনা গঞ্জনা সয়ে মন খারাপের মধ্যেই বেঁচে থাকা লড়াই চালাতে থাকে। নিজের যতোটুকু যা আছে, তা দিয়েই স্ববলম্বী হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্ঠা করে যায়।

নার্গিসের বাড়ির পূর্বপার্শ্বে অমলের বোনেরা থাকে। অমল সেখানে প্রায়ই যায়। তাকে একটু ঘুরে যেতে হচ্ছিলো। নজর পড়ে নার্গিসের উঠনের উপর। উঠোন দিয়ে গেলে, তার বোনের বাড়ি যেতে পথটা বেশ খাটো হয়। যে কথা সেই কাজ। নার্গিসকে হুকুম করে তোমার উঠোন দিয়ে যাওয়ার পারমিশন দাও। পারমিশন না নিয়েও অমল যখন তখন নার্গিসের উঠোন ব্যবহার করতে পারে সে। সে ক্ষমতাও তার আছে। কিন্তু রাত-বিরেতে এভাবে যাওয়া আসা করলে তৃতীয় পক্ষ কেউ বাধার সৃষ্টি করতে পারে। এ তৃতীয় পক্ষের মুখ বন্ধ করার জন্যই মুলতঃ পারমিশন চাওয়া। মোড়লেরও সেই একই ইচ্ছা। নার্গিস অমলকে তার উঠোন ব্যবহারের অনুমতি দেয়। অমল যখন তার উঠোন দিয়ে যায়-আসে, বুকের মধে খচ্খচ্ করে। কিন্তু উপায় নেই। মুখ বুঁজে সহ্য করে সে।

অমলদের বাড়িতে ঝগড়া লেগেই থাকে। কেউ সেখানে নাক গলাতে পারে না। মোড়ল তার পক্ষে আছে যে! অমলদের সংসার অনেক বড়ো মোড়লের দোকান থেকে অনেক টাকার সওদা কিনে থাকে সে। কথা আছে, লাভে লোহা বয়। মোড়লও অমলদের বাড়িতে এতো ঝগড়া থাকলেও অদেখা ভাব দেখায়। কিন্তু, এইতো সেদিন, নার্গিসের বাড়িতে সামান্য ঝামেলা হয়েছিলো। অমল এসে হাজির। সাথে তার সাঙ্গ-পাঙ্গরাও। কোনো রকমে সবাইকে ঠাণ্ডা করতে পেরেছিলো নার্গিস।

নার্গিস অমলের বিষয়ে বোবা হয়ে গিয়েছে প্রায়। কিচ্ছু বলে না। অমলের সব কথা মুখ বুঁজে আমল করে। সেদিন রাতে তাহাজ্জুদের নামাজে বসে নার্গিস অনেক কেঁদেছিলো। চোখের নিচে কান্নার জলের দাগ স্পষ্ট। মোড়লের কাছে কিছু টাকা জমিয়েছিলো সে। আজ তা আনার কথা ছিলো। মোড়ল সেটা এখনই ফেরত দিতে রাজি হয় না। সে নার্গিসকে নানান বিষয়ে প্রশ্ন করে। নার্গিস কিছু বলে না। তার মন খুব খারাপ।
-

গল্পকার
০১.০৪.২০২২

Post a Comment

Previous Post Next Post