ফেসবুকের উপকারিতা



ফেসবুক ব্যবহারের নানাবিধ অপকার অনেকেই গুনে থাকেন। আমিও গুনে থাকি অনেক সময়। কারণ ফেসবুক ব্যবহারে তিতা-মিঠা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে মাথা খারাপের দশাও হয়ে যায়। ফেসবুক এসে ছোটো-বড়োর লেহাজ কমে গেছে। ১৩ বছরের বড়ো সবাইকে বন্ধু হিসেবেই দেখে থাকে ফেসবুক।

ধরুন, ফেসবুক আইডিতে সুন্দর মাছুম এক ছেলের চেহারা। মামা ডেকেছে, আঙ্কেল ডেকেছে, দাদা বা দোস্তও বলেছে। শেষে দেখা গেলো সে ছেলে নয়- মেয়ে! এবং যেনো-তেনো মেয়ে নয়, আপনার থেকেও সিনিয়র। নৈতিকতার বিষয় মনে রেখে কথা বললে- ভেবে নেয় আনাড়ী। কড়ক হলে- এমন অভদ্র আর একটি নেই জগতে। আবার কথা না বললে- দেমাগী, বদরাগী ইত্যাদি। যাবেন কোথায়!

লেখালেখিটা আরম্ভ করেছিলাম স্কুল জীবনেই। তখোন না জেনে  না বুঝে লিখেছি। এক পর্যায়ে এটা চর্চা পর্যায়ে এসে যায়। ভালোই চলছিলো। গানের পোকা ঢুকে গেলো মাথায়। গান লেখা আরম্ভ করলাম। ঝক্কিটা বাড়ালাম আর কি! ছড়া কবিতা পত্রিকায় পাঠতে হতো। পত্রিকা লেখা ছাপালে খুশি হতাম, না ছাপলে খানিক গালাগাল করে আবার লেখা পাঠাতাম। কিন্তু গান লিখে সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীদের পেছনে দৌড়ানোর প্রয়োজন পড়ে গেলো। হয়রানীর শেষ নেই। তার উপর এলো আবার উটকো ঝামেলা। বেতার টিভিতে গীতিকার হিসেবে তালিকাভূক্ত না হলে তার গান বেতারে গাওয়া যাবে, কিন্তু নাম সম্প্রচার করা হবে না। নিন ঠ্যালা, যেই নামের জন্য এতো কিছু, সেই নামই যদি বেতারে না  শোনা যায়- তাহলে গান লিখে লাভ কি! আপনারাই বলুন।

আজ ওদিকে যেতে চাচ্ছি না। গানে বেশ ভালোই নাম হয়েছে। অনেক সিনিয়র শিল্পীগণ বেতার, টিভি, অডিও-ভিডিওতে গান গেয়েছেন। হঠাৎ দেশীয় সঙ্গীত বাজারে ধ্বস নেমে এলো। হাতে হাতে মোবাইলে বাজে শুধু বিদেশি শিল্পীর গান। নতুন গান তৈরী না হলে লেখকদের কি প্রয়োজন? শিল্পীরা তাদের কণ্ঠে গাওয়া গান সিডিতে ট্রান্সফার করে ভিডিওতে ছাড়তে থাকলো। আমাদের দেশে লেখকদের লেখস্বত্ত্ব সংরক্ষণের ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। লেখালেখিতে বেকার হয়ে গেলাম।

ইতোমধ্যে এসে গেছে ফেসবুক। সবাই দেখি ফেসবুকের গল্প করে। কী করি! অনেক কষ্টে নামটাকে খানিকটা তুলেছি। ফেসবুকে লিখতে গিয়ে সেই নাম যদি ডুবে যায়! লেখকরা সব কিছু ডুবে গেলেও নিজের নামটাকে ডুবতে দেখতে পারে কি? বন্ধুদের সাথে আড্ডায় এক জনের পরামর্শে ছদ্মনামে আইডি খুলে লেখা আরম্ভ করি। শুরু হলো পুনঃচর্চা। তারপর এবং তারপর চলছে আজো।

ভাবছেন সুবিধার কথা লিখছি না কেন? সুবিধা বিষয়টা আমার কাছে আপেক্ষিক মনে হয়। যেমন- অল্প পরিসরে দুজন থাকতে গেলে একজনের সুবিধা হলে অন্যের অসুবিধা হয়। আমার দিকে সুবিধেটা হলো-এখানে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। কি লিখতে হবে তা-ও কেউ ইন্সট্রাকশন দেবে না। ভালো লিখতে হলে, ভালো লেখকের লিখন কৌশল দেখতে হবে, ভালো লাগার বিষয়টা মাথায় রেখে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এটা জানাই ছিলো। ছিলো না কেবল মোটিভিশন। ফেসবুকে সেই সুবিধাও আছে। ভালো লিখতে পারলে বিনে পয়সায় প্রশংসা পাওয়া যায়। আবার কাউকে প্রশংসা করেও প্রশংসা পাওয়া যায়। প্রয়োজন মোটিভেশন। আর উপযুক্ত চর্চা। খাতা কলম ছাড়া আমার জানা মতে ফেসবুক ছাড়া আর কোনো ক্ষেত্র আছে যেখানে স্বাধীন মতো লেখা যায়।

একজন সচেতন আর সৃজনশীল মানুষকে লিখিয়ে বানিয়েই ছাড়ে এই প্লাট ফরম। তবে, তাকে অবশ্যই বোধ-বুদ্ধি সম্পন্ন হতে হবে। সমালোচনাকে গ্রহণ করে তার উত্তর সমালোচনায় নয়, লেখনি দিয়ে দিতে হবে। এরপর উস্কানীতো আছেই। অনেক সময় ব্যাড কমেন্টস আগুনে ঘি ঢালার কাজ করে। সেই আগুনকে লেখনিতে আনার চেষ্টা করতে হবে।

কোনো কথা আমার প্রতিকূলে যাচ্ছে, সে ভেবে বসলে আবার হবে না। অবজ্ঞার কোন ভাষা নেই। সেটা বুঝতে শেখায় ফেসবুক। আনফ্রেন্ড করার অপশনটা খুবেই মজার। আবার ব্লক মারা যায়। লাইক দিয়ে সেটা প্রত্যাহার করা যায়। এমনি আরও অনেক সুবিধে আমি ভোগ করে থাকি। আপনাদেরটা কমেন্টস-এ লিখতে পারেন।

-

ধন্যবাদ সবাইকে-


সাগর আল হেলাল

কলামিস্ট

২৪.০৩.২০২২

Post a Comment

Previous Post Next Post