অণুগল্পঃ হ্যাঁ তা-ই তো

 


হা-ডু-ডু বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। খেলাটিকে জাতীয় খেলা হিসাবে কবে, কিভাবে এবং কোন প্রেক্ষাপটে গ্রহণ করা হয়েছে তা জানি না। এই খেলাটি আমার মরহুম দাদা খুবই পছন্দ করতেন। ছেলেবেলা, অতো কি আর বুঝি ! বিকেল হলেই ছুটে যেতাম মাঠে ডুগ-ডুগ মানে হা-ডু-ডু খেলতে।   

এক বিকেলে। আমরা বৈঠকখানায় বসে আমাদের পড়া পড়ছিলাম। দাদা এলেন আমাদের সাথে গল্প করতে। গল্পের এক ফাঁকে উনি হা-ডু-ডু খেলা কেন ওনার পছন্দ তা তুলে ধরলেন। আমি সেই গল্পটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।   

আমার দাদা বৃটিশ আমল দেখেছিলেন, দেখেছিলেন পাকিস্তানী আমলও। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার বেশ কিছুকাল পরে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এগুলো বলার অর্থ- তিনি অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ছিলেন। উনি বলতেন- হা-ডু-ডু খেলাটা আসলে ঔপনিবেশিক শাসনেরই রূপক প্রদর্শন। শাসক শ্রেণি তাদের দোসরদের সহায়তায় এদেশে হা-ডু-ডু খেলাটিকে জনপ্রিয় করে তোলে। আমরা কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করি- কিভাবে ?   

তিনি ব্যাখ্যা করেন- তোমরা হা-ডু-ডু বা কাবাডি খেলায় কী দেখতে পাও? একজন খেলোয়াড় বিপক্ষের খেলোয়ারকে নিজের দম বাঁচিয়ে ছুঁয়ে আসতে চায়। তাই না ? আমরা সমস্বরে বলি হ্যাঁ, তাই-ই তো। তিনি যোগ করেন- যদি সে ছুঁতে গিয়ে ধরা পড়ে, তখন? 

আমরা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। তিনি যোগ করেন- সবাই সম্মিলিতভাবে তাকে আটক করে এবং তার দম থাকা পর্যন্ত নিষ্পেশিত করতে থাকে। আমরা সমস্বরে বলি- হ্যাঁ, তাই-ই তো। দাদা আবার বলেন- বৃটিশদের কিংবা পাকিস্তানীদের আসল চেহারা কেউ জেনে গেলে (জেনে যাওয়া বলতে তিনি স্পর্শ করাকে বুঝিয়েছিলেন) বা প্রকাশ করলে তারও ঐ একই অবস্থা হতো। তোমরাতো জানো, দম শেষ- মানে, প্রাণ শেষ ?   আমরা সমস্বরে বলে উঠি- হ্যাঁ, তাই-ই তো।

দাদা এরপর বলেন- তারপর কী? 

আমরা সমস্বরে বলি- যদি ছুঁয়ে আসতে পারে, তাহলেই জয়ী। 

দাদা বলেন- হ্যাঁ, তাই-ইতো।

আমরা বলি- ইতিহাস অনুযায়ী এ কে ফজলুল হক তাহলে লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে বৃটিশকে ছুঁয়েছিলেন ? 

দাদা বলেন- হ্যাঁ তাই-ইতো।

বায়ান্নতে সালাম রফিক জব্বার বরকত খাজা নাজিম উদ্দিনকে ছুঁয়েছিলেন ? 

দাদা বলেন- হ্যাঁ, তাই-ই তো। 

১৯৭১ 

১৯৯১ 

হা-ডু-ডু ?

দাদা হেসে হেসে বল্লেন- হ্যাঁ, তাই-ইতো।

-

সাগর আল হেলাল

গল্পকার

২৪.০৩.২০২২


Post a Comment

Previous Post Next Post