দুঃখের শেঁকড়ে বিষ্ময়কর সুখ

  


সুবল কেন চলে গেলো জানতে পারে নি চারুলতা। লতা মাসিও তাকে কিছু বলে না। তার সেই এক কথা, সে কিছু জানে না। যাওয়ার সময় কেবল বলেছে, মাসী ভুল-ত্রুটি করে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন। চারুলতার সাথে দেখা হলো না, ওকে বলবেন- আবার দেখা হবে।

আবার দেখা হবে ? এই কথা বলতে গেলো কেনো সে ? এই প্রশ্নটা অন্তত হাজার বার জিজ্ঞেস করেছে চারুলতা। মাসী তার যথাযথ উত্তর দিতে পারে নি। মানে তার উত্তরে চারুলতা সন্তুষ্ট হতে পারে নি। বুকের দীর্ঘশ্বাস চারুলতাকে ভেতর ভেতর কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। কাজ কর্ম করে ঠিকই কিন্তু আগের মতো প্রাণ চাঞ্চল্যতা নেই তার মধ্যে। সুবল তার প্রাণের সব সুখ, সব আনন্দ কেড়ে নিয়ে চলে গেছে। দোতালার সিঁড়ি ঘরে নজর পড়লে এখনো আলো জ্বলতে দেখা যায়। কিন্তু সে আলো চারুলতাকে আকর্ষণ করে না। বরং উল্টো আলোটা দেখলে তার এখন রাগ হয়। আলোটা দেখলেই সুবলের কথা মনে পড়ে, বুকের যন্ত্রণা বেড়ে যায়।

-      তুই এহনো শুয়ে আছিস চারু ? চানওতো করিস্ নাই ? আমি একা একা কি অতো কাম সামাল দিতে পারি ? তোরে না দেইখা তাড়াতাড়ি ছুটে আইলাম। আরতী দেবী যদি তোকে ডেকে বসে কী জবাব দিমু আমি। নে, ওঠ। লতা মাসি চারুলতাকে টেনে তোলার চেষ্টা করে।

-         সুবলের কোনো খোঁজ শুনলা মাসি ?

-     এই অন্দর মহলে কেডায় সুবলের খবর আনবো। তাছাড়া আমি কি তারে আগে থেকে চিনি না জানি যে, কারো দিয়ে খোঁজ-খবর করাবো !

-      তুমি আমার কোনো কষ্টই বুঝো না মাসি। আমি যদি তোমার মাইয়া হইতাম, পারতা এমন চুপটি করে থাকতে ? হারামীটা বলেও গেলো না, আমি কি করবো। আবার দেখা হইবো, এই কথাডার কি মানে ? মরলে শশ্মান ঘাটে দেহা হইবো !

কথাটা লতা মাসির কলিজায় আঘাত করে। চারুলতার প্রতি কন্যাসম ভালোবাসা তার অন্তরে। চারুলতাও সে কথা জানে। কিন্তু আক্ষেপে এমন সব কথা বলছে। কিন্তু তারই বা কি করার আছে! এই চৌহদ্দীর বাইরে তার যাওয়া পড়ে না বলেই চলে। সে কোথা থেকে আনবে সুবলের খবর। নুতন যেই ছেলেটা এসেছে, ভীষণ চালাক। আগে ভাগে তাকে কিছু বলা যাবে না। আরতী দেবীর কাছে বলে দিতে পারে। শেষে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে বিষয়টা। সুবল ছিলো কাদা মাটির মতো। দেখলেই মায়া করতো। এই পাগলীর আর দোষ কী ! অমন ছেলেটাকে কে না ভালোবাসবে ! কিন্তু চাইলেই কি সবকিছু মেলে জগতে? লতামাসির বুক ভেঙেও বের হয়ে আসে এক করুণ দীর্ঘশ্বাস! তাকিয়ে দেখে চারুলতা বিছনা ছেড়ে স্নানে চলে গেছে। সে পানের কৌটো নিয়ে বসে।

স্নান সেরে কক্ষে প্রবেশ করে চারলতা। নিয়ম মতো ঘরের ভেতরেই কাপড়-চোপড় মেলে দেয়। লতামাসিকে পান খেতে দেখে বলে-

-      মাসি, তোমার ঠোঁটদুইডাতো বেশ লাল হইছে দেখছি। শুনছি, পান খেয়ে যাগো ঠোঁট লাল হয়- তারা স্বামী সোহাগী হয়। মেসো তোমারে খুব আদর করতো, না ?

লতা মাসি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে চারুলতার দিকে। এই পরিবর্তন ?

-       কল পাড়ে কারে দেইখা এমন মন পরিবর্তন হইলো ? এই ছিলো মেঘে ঢাকা, এহন যে দেহি চাঁদখান পূর্নিমা দেখাইতাছে ?

-     মন ভার কইরা লাভ কি মাসি ? তোমার পুতে কি আইবো ? কইয়া গেছে- আবার দেহা হবি, আচ্ছা- কইছে যহন, হইবো।

-      আরে হইতেও তো পারে। দুনিয়াডা গোল। নে তাড়াতাড়ি তৈয়ার হ’য়া নে। আমি এই ফাঁকে আরেক পান মুখি দিই। বাড়ির ভিতরে গেলে তো আর এসব চলে না। আরতী দেবীর এক কথা- শোনো বাপু, আমার সামনে পান খাওয়া চলবো না। চইলবো না !

এই কথাটা লতামাসি মুখ ভেঁঙচাইয়া বলে। বুড়ির কথা বলার ঢং দেখে চারুলতা খিলখিল করে হেসে ওঠে।

-

চলবে-

Post a Comment

Previous Post Next Post