উড়ে যাচ্ছিল পেত্নী




পৃথিবীতে ভূত-পেত্নীর আবির্ভাব সময়ের কথা। ওদের না এসে উপায় ছিলো না। কারণ, বাতাসেরা উত্তর থেকে দক্ষিণে যাওয়ার দিন থেকেই পৃথিবীতে বসন্তকালের আগমন ঘটে। আর বসন্তে ফুল ফুটবেই, পাখি গান গাইবেই- গুন-গুন করবেই নীল ভ্রমরা। এতো যখন ডাকাডাকি, ভূত-পেত্নীদের না এসে কি উপায় ছিলো !

রাত্রী গভীর নয়, তবে চাঁদের জোছনা গভীর মায়াময়। মহুয়া-কাঞ্চনের সুবাসে বিমোহিত ধরণী। নাতিশীতোষ্ণ ঋতুরাজ বসন্তে আঠারোয় পা রাখা তরুণের ঘরে থাকা কঠিন। ওরা চাঁদেরে নিয়ে কবিতা লেখে, গান করে, কথা কয়। আবার গল্প করে সারারাত নিরিবিলি। কতো খেলা জানে এই চাঁদেরা, মানুষ তখনো আবিস্কার করতে পারেনি।   

ঘরের সাথে ইছামতি। এ নদীতে চর নেই। ঘর ছাড়লেই জলের স্পর্শ। রাত এগারোয় নদীতে পা ডুবিয়ে গান ধরেছে মোকছেদ। ভাটিয়ালী গান সে খুবই সুন্দর করে গায়। জোয়ারের উজানে থাকা নৌকো যেমন ভাটির টানে নাচতে নাচতে, দুলতে দুলতে ছুটে চলে- মোকছেদের ভাটিয়ালী গান শুনেও একই অবস্থা হয় স্বপ্ন উজানে বাস করা মানুষের। হঠাৎ মোকছেদের গান উজানে ছোটে। ঠিক যেমনটি চাঁদের টানে জোয়ার ভাটা। মোকছেদ আর অন্য কোন গান গাইতে চায় না। মন যায় মজে উত্তাল সঙ্গীতে।   

অনেক লোক জমায়েত হয়েছে। সরাতলায় পাওয়া যায় জোছনার পায়ের স্যাণ্ডেল। অতঃপর ঘন সরাপাতার আড়ালে লুকানো জোছনা। কারো মুখে কোন কথা নেই। কি বলবে বা করবে, কারো মাথায় কিচ্ছু আসছে না। মনে মনে হাসে জোছনা। ইছামতি থেকে ফিরে বাড়িতে ঢোকার মুখেই জানতে পায় তাকে খোঁজাখুঁজি করা হচ্ছে। সে আর বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেনি।   

ঠিক তখুনি আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল ভাসমান জগতের একদল ভূত আর পেত্নী। লোক সমাগম দেখে এক চক্কর দিয়ে বিষয়টি তারা জরিপ করে। উড়ন্ত অবস্থাতেই সিদ্ধান্ত নেয়- পৃথিবীতে আবাস স্থাপনের। বসন্তকালের আবহাওয়া তাদের কাছে খুব ভালো লেগেছিলো। জোছনা চোখ কাঁচুমাচুঁ করে বলে- আমারে ভূতে পাইছে। ভূ-----------ত।

-

সাগর আল হেলাল

গল্পকার

২৪.০৩.২০২২


Post a Comment

Previous Post Next Post