বাক্যটি পড়ালেখা কারোই অজানা নয়। পাপ শব্দটি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। এজন্য আলোচনার সুবিধার্থে পাপের নাম রাখলাম ‘সুখ’। তাহলে, বাক্যটি দাঁড়ালো লোভে সুখ, সুখে মৃত্যু। সুখ নিয়ে বিতর্ক না হয় অন্যদিন হবে !
লোভ হলো সু-নির্দিষ্ট কোন কিছু লাভ করার আকাঙ্ক্ষা। কাঙ্ক্ষিত ফল লাভের জন্য কর্ম যথাযথ হচ্ছে কি না, সেই বিবেচনা সেখানে অর্থহীন। কর্ম অনুযায়ী ফল লাভের আকাঙ্ক্ষা লোভ নয় বলেই মনে হয় আমার কাছে। লোভ মানুষের অন্তরের গভীরে লুকিয়ে থাকা একটি স্বত্ত্বা। যা লোকে অত্যন্ত সযতনে সকল প্রতিবন্ধকতার মাঝেও অন্তরের মধ্যে গোপন রাখে এবং সেটি লাভ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। এই চেষ্টার সময় বর্তমান কর্মের প্রতি তার খেয়াল থাকে না এবং কর্ম অনুযায়ী ফল লাভে ব্যর্থ বা ক্ষতির সম্মুখীন হলেও সেদিকে দৃকপাত করে না। ফলে, লোভের বশবর্তী থাকায় বর্তমান প্রাপ্তিতে সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট কোনটাই নির্ণয় করতে সে পারে না। সে লোভের মধ্যেই সুখ (পাপ) পেতে থাকে।
নিজের চেষ্টায় লোভ পূরণে ব্যর্থরা অন্যের সাহায্য প্রার্থনা করে থাকে। এখানে এসে অন্তরে লুকিয়ে থাকা লোভের ডালপালা গজায়। কারণ, সাহায্যদাতা জেনে যায় এই লোভের গোপন তথ্য। এটিকে সে আরও উস্কে দেয়। ফলে সে আরও সুখের মধ্যে (পাপের মধ্যে) হাবুডুবু খেতে খেতে থাকে। এমন সুখি ব্যক্তিকে দিয়ে যে কোনও অসম্ভব কাজ করিয়ে নেওয়া যায়।
বাস্তবে, সুখের (পাপের) মধ্যে হাবুডুবু খাওয়া এমন কেউ যদি দীর্ঘ ৫ (পাঁচ) বছর লোভের বস্তুটি পাওয়ার জন্য ক্রীড়নকের মতো শ্রম দিতে থাকে এবং বর্তমান শ্রমের মূল্যের প্রতি দৃকপাত না করে, তাহলে- তার ভবিষ্যত কি হতে পারে ? এমন কি হতে পারতো না যে, সে বর্তমান শ্রমের ন্যায্য মূল্য পেয়ে আকাঙ্ক্ষিত ফলের চেয়েও বেশি ফল পেতে পারতো! হয়তো পারতো, কিংবা পারতো না। কিন্তু লোভনীয় বস্তুটি না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকে তো মুক্ত থাকতে পারতো !
বর্তমান শ্রমের কর্মফলকে উপেক্ষা করে আকাঙ্ক্ষার দ্বারা সৃষ্ট ফললাভের চেষ্টায় সে এমনই সুখি (পাপী) হয়ে যায় যে, অবশেষে একদিন আকাঙ্ক্ষার ব্যর্থতায় মৃত্যুকেও হাসি মুখে মেনে নেয়। সেই মৃত্যু তার কাছে অনেক সুখের এবং গৌরবের মনে হয়। সুতরাং লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু বাক্যটি যিনি লিখেছিলেন- তিনি যথার্থই লিখেছেন।
-
সাগর আল হেলাল
কলামিস্ট
২৫.০৩.২০২২
إرسال تعليق