ফকির-মিসকিন শব্দ দুটির সাথে আমরা সকলেই বেশ পরিচিত। ছোট বেলায় ধর্মীয় যে কোন অনুষ্ঠান হলেই দাদী আমাকে বলতেন- যা, কয়েক জন ফকির-মিসকিন ধরে নিয়ে আয়। ফকির-মিসকিন বলতে জ্ঞানত বুঝতাম যে, ভিক্ষুকের কথা-ই বলা হচ্ছে এবং যথারীতি কয়েকজন ভিক্ষুককে ডেকে আনতাম। কিন্তু মনে একটা প্রশ্ন জাগতো- ভিক্ষুককে ফকির বলা হলে মিসকিন কারা ? ঐ বয়সে প্রশ্ন করার অধিকার ছিলো না। এমনই এক পারিবারিক পরিবেশও ছিলো না। দাদা-দাদীর সাথে সম্পর্ক ছিলো শ্রদ্ধা ও অনুগত্যের। আজ দাদীও নেই, দাদাও নেই। ফকির-মিসকিন ডাকার নির্দেশও নেই।
ভিক্ষুক ভিক্ষা করে থাকে। ভিক্ষা কি ? ভিক্ষা হলো এমন একটি কর্ম যার জন্য প্রাপ্ত বস্তুর জন্য গ্রহীতাকে কোন পরিশ্রম করতে হয় না। ভিক্ষা প্রদানকারীর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। সে ইচ্ছা করলে দিতেও পারেন আবার না-ও দিতে পারেন। এ জন্য প্রাপকের কিছু বলার থাকে না। আমাদের দেশে সাধারণত যে সকল ব্যক্তি তার নৈমিত্তিক চাহিদা পূরণে অক্ষম। বিশেষ করে দু বেলা দু মুঠো অন্নের সংস্থান করার সামর্থ নেই এমন ব্যক্তি যদি অন্যের কাছে হাত পেতে সাহায্যের আবেদন করে, আমরা তাকে ভিক্ষুক বলে থাকি। তারা যেহেতু অন্ন বস্ত্রের জন্য এ রূপ সাহায্য কামনা করে, সেহেতু মানুষের মনে তাদের প্রতি বিশেষ সহানুভূতিও রয়েছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ ভিক্ষুককে ডেকেও সাহায্য করে থাকে এবং বিশেষ ভালোবাসাও প্রদর্শন করে থাকে। মানুষ বিশ্বাস করে ভিক্ষুক বিশেষ দুরাবস্থার কারণেই ভিক্ষা করে থাকে।
অন্যদিকে, মিসকিন হলো- যে নিজের তৈরী কর্মের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। এই কর্ম তার জন্য কতটুকু সুফলদায়ক কিংবা কতটুকু অসম্মানের সেদিকে খেয়াল করে না। নিজের মতো করে চলতেই পছন্দ করে। ভিক্ষুকদের মধ্যে মিসকিন তারা, সে সকল ব্যক্তি সাময়িক অসচ্ছলতার কারণে ভিক্ষাবৃত্তি আরম্ভ করলো। দেখা গেলো কিছুদিন পর তার সমস্যা দূর হয়ে গেলো এবং সে স্বচ্ছল হয়ে গেলো। এখন তার ভিক্ষা না করলেও চলে। এমন অবস্থায়, ঐ ব্যক্তি যদি তার ভিক্ষাবৃত্তি চালিয়েই যায়, তাকে মিসকিন বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ সে ভিক্ষাবৃত্তির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেছে।
মনের মধ্যে ভালো লেগেই উঠেছিলো, কিন্তু যখন মনে পড়লো- কোন কর্ম ছাড়া ফল লাভকে ভিক্ষা বলে, তখন এক্কেবারে পানসে হয়ে গেলো সব ভালো লাগা। বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় পরিশ্রম অনুযায়ী ফল প্রাপ্তির আশা করা মানুষের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। সাফল্য প্রাপ্তির জন্য মরিয়া হলেও সে অনুযায়ী পরিশ্রম করতে রাজী নয় যেন। উদাহরণ দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে প্রতীয়মান হয় না। আর মিসকিন ?
-
জুলাই, ২০১৫
إرسال تعليق